পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ২য় শিফটের অচলাবস্থা এবং কিছু কথা

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড আর শিক্ষক সমাজের আয়না। পৃথিবীতে বিদ্যমান যে সকল পেশা রয়েছে তার মধ্যে শিক্ষকতা হচ্ছে অন্যতম মহৎ পেশা, যা আমি আপনি আমরা সকলেই অকপটে স্বীকার করি।
:ফাইল ছবি
বিশ্বায়নের এ যুগে অথাৎ একুশ শতকে এসে যেখানে সর্বত্রই আধুনিকতার ছোঁয়া, যেখানে সকলে উন্নত জীবন মান নিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছে সেখানে সকলের মতো শিক্ষকদেরও রয়েছে সে অধিকার সেটা অস্বীকার করার উপায় নেই। পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নত দেশ সমূহের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই শিক্ষকতা হচ্ছে অন্যতম হাইয়েস্ট পেইড জব। কারন তারা চান যেন তাদের সেরা মেধাবীরা শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে গ্রহন করেন এবং জাতিকে শিক্ষা এবং গবেষণায় আরো বেশি এগিয়ে নিতে পারেন।

এখন কথায় আসি আমাদের দেশ প্রসঙ্গে, বিশ্বায়নের এ যুগে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ গুলো যখন চাচ্ছে ধীরে ধীরে উন্নতির দিকে ধাবিত হতে। অন্যদের মতো বাংলাদেশে সরকারও সরকারি চাকরিজীবীদের উন্নতজীবন মান রক্ষার জন্য ঘোষণা করেন বেতন স্কেল-২০১৫। যেখানে মোটামুটি সকল গ্রেডের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন হয় প্রায় দ্বিগুন। একটি নিন্ম মধ্যম আয়ের দেশে এটি নিঃসন্দেহে একটি বড় পাওয়া সরকারি চাকরিজীবীদের। যার ফলে মোটামুটি সকল ক্ষেত্রের কর্মকর্তা কর্মচারীরা অত্যন্ত খুশি। শুধুমাত্র একটি ক্ষেত্র ছাড়া।

আর সেটা হল আমাদের পলিটেকনিক এবং টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের কিছু শিক্ষক (আমি আবার বলছি না সবাই, কিছু শিক্ষক। যারা প্রকৃত পক্ষে অযোগ্য, যারা নাম মাত্র নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রজেক্টের আন্ডারে ১৫-২০ বছর চাকরী করে সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করে কিছুদিন পূর্বে চাকরী স্থায়ী করেছেন)।

তারা অনান্য সকল কর্মকর্তা কর্মচারীদের মতো বেতন পান। অর্থাৎ সকলেই ৫ম-১০ম গ্রেডে বেতন পান। যা প্রজাতন্রের অনান্য সকল ক্ষেত্রের সম গ্রেডের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতনের সমান এবং তারা অতিরিক্ত খুব সম্ভবত বেতনের ২০% পেয়ে থাকেন সম্মানী ভাতা কারন তারা একই সাথে ২য় শিফটে পড়ান বলে।

এখন আমদের সম্মানিত এই শিক্ষক সমাজ এতে ভীষণ অসন্তুষ্ট। তারা চান যেন দ্বিতীয় শিফটের জন্য তাদের (আমি ইচ্ছে করেই তাঁদের লিখলাম না) বেতনের সমপরিমাণ টাকা দেয়া হয়। অর্থাৎ ২ শিফটে পড়াবেন বলে তাদের দ্বিগুন বেতন দিতে হবে, যা হবে সম গ্রেডের কর্মকর্তা কর্মচারীদের দ্বিগুণ। যার মানে হল ১০ গ্রেডের অন্য একজন কর্মকর্তা যদি পান ৪০ হাজার টাকা তাহলে তারা পাবেন ৮০ হাজার টাকা (মগের মুল্লুক)।

অথচ তারা এটা ভাবেন না অন্যদের থেকে তাদের কর্মঘণ্টা পার্থক্য মাত্র ২ ঘন্টা মানে সরকারি অনান্য অফিসের কার্যক্রম শুরু হয় সকাল ৮ টায় আর শেষ হয় বিকাল ৫ টায়। আর পলিটেকনিকে/ টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজে শুরু হয় সকাল ৭ঃ৩০ মিনিটে আর শেষ হয় সন্ধ্যা ৬ঃ৩০ মিনিটে। আর এই ২ ঘন্টার জন্য তাদের দাবি দ্বিগুন বেতন।

কিন্তু সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ এটা মনে হয় ভুলে যান যে ২য় শিফটে তারা কেমন ক্লাস নেন। আমরা কিন্তু জানি আপনারা ২য় শিফটে কেমন পড়ান, কয়টা ক্লাস নেন। সেদিক নিয়ে কথা বলব না। আচ্ছা ধরে নিলাম আপনারা বেশি চাইতেই পারেন। কাল দেখলাম একজন শিক্ষক নেতা উন্নত রাষ্ট্র গুলোতে শিক্ষকদের বেতন বেশি হেনতেন বললেন একজন শিক্ষার্থীকে।

আচ্ছা শিক্ষক, আপনি ঈমানের সাথে বলুনতো আপনি কি তাদের জাপান/আমেরিকার মত পড়ান? জানি এর কোন উত্তর নেই। তাহলে কেন এই উন্নত রাষ্টের উদাহরণ দেন? আচ্ছা ধরে নিলাম আপনার চাওয়া ঠিক আছে। আপনি আপনার পাওনার জন্য আন্দোলন করবেন। ভালকথা, করুন না। কিন্তু শিক্ষক এই আন্দোলনটা কেন ২ মাস আগে বা ২ মাস পরে করলেন না? কেন নতুন কোমলমতী, সদ্য পলিটেকনিকে ভর্তি হওয়া কিশোর কিশোরী যারা জীবনের প্রথম দিন একটা স্বপ্ন নিয়ে কলেজে আসার পর কোন রকম ক্লাস করতে পারল না। পেল না আপনাদের থেকে ভাল ব্যাবহার।  আজ ৪ দিন চলে গেলেও আপনারা তাদের ভর্তি নিচ্ছেন না।

এই কোমলমতি কিশোর কিশোরীরা কি শিখল আপনাদের মতো শিক্ষকদের কাছ থেকে?? তারা কি এটাই শিখল না যে, অর্থই জীবনের সব। তারা কি আপনাদের দেখে এটা ভাববে না, আপনারা লোভী, নিকৃষ্ট। এই যে অর্থের লোভে হাজার হাজার ছেলে মেয়ের ভাগ্য নিয়ে খেলছেন।

একবার ভাবুনতো এরা আপনাদের সম্মান শ্রদ্ধা কতটুকু করবে? আর খোদা না করুক এরা যদি আপনাদের বিরুদ্ধে চলে গিয়ে আপনাদের চরম মাত্রায় অপমান অপদস্ত করে আপনার সম্মান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে? এখনো সময় আছে অন্তত এদের জীবন নিয়ে খেলা বন্ধ করুন। এদের ভর্তি কার্যক্রম শুরু করুন না হলে হয়ত এরাই আপনাদের পিঠের চামড়া তুলে ডুগডুগি বাজাবে।

পরিশেষে আমার এক সম্মানিত শিক্ষকের একটা উক্তি দিয়ে লিখা শেষ করব- "টাকা উপার্জন আর সামাজিক মর্যাদা, সম্মান আলাদা জিনিস"। টাকার ধান্ধা বাদ দিয়ে সম্মানের ধান্ধা করুন মহোদয়গণ।
লিখা: খালেকুল ইসলাম রিপন।

Comments